আমরা সবাই ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি “স্বাস্থ্যই সম্পদ”, কিন্তু এই কথাটার প্রকৃত অর্থ আমরা অনেকেই জানি না। এর প্রকৃত অর্থ হল আমরা যতই সমৃদ্ধশালী হই না কেন, আমরা যদি স্বাস্থ্যবান না হই, তাহলে আমরা জীবনের আনন্দ উপভোগ করতে পারবো না।
আমাদের এই ছন্নছাড়া জীবন যাপনের জন্য আমরা সবাই আজকাল নানান অসুখের সম্মুখীন হই। তার মধ্যে কিছু হল বেশি ওজন, মেদবৃদ্ধি, ডায়াবেটিস, উচ্চ কলেসটেরল, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ রোগ, কিডনির সমস্যা, আরও না জানি কত অজানা অসুখ। কখনো ভেবে দেখেছেন যে কি লাভ পাঁচ তাঁরা হোটেল এ গিয়ে যদি আপনি কিছু খেতেই পারলেন না? বা আপনি বন্ধুদের সাথে ড্রিঙ্ক করা উপভোগ করতে পারছেন না কারন আপনার অল্পবয়সী দিনগুলো তে আপনি অতিরিক্ত মাত্রায় পান করেছেন বলে? সেইরকম অর্থের কি বা প্রয়োজন যদি সেটা নিজের বা বন্ধুদের বা পরিবারের আনন্দেই কাজে লাগলো না। শরীরের যত্ন নেওয়া আর সুস্বাস্থ্য হওয়া খুব জরুরী। অল্প অর্থ যথেষ্ট যদি আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
এখানে কিছু সুস্বাস্থের টিপস দেওয়া হলঃ
১৬ টি হেল্থ টিপস মহিলাদের জন্য
১। খাওয়া দাওয়ার ওপরে যত্ন নিন
উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন। এই গুলো খেলে ক্রমাগত আপনার স্বাস্থে প্রভাব পরতে পারে আর নানান অসুখ বিসুখ ঘর করতে পারে যেমন মেদ বৃদ্ধি, হৃদ রোগ, আর কোলেস্টেরল ইত্যাদি। আপনাকে একেবারেই এইসব লোভনীয় খাবার মানা করা হচ্ছে না, শুধু বলা হচ্ছে কম খাওয়া উচিৎ যাতে ইচ্ছে থাকলেও একে বারেই খেতে না পারার এইরকম কোন পর্যায় না পৌছতে হয়। আপনার শরীর ও স্বাস্থ্য সুস্থ রাখার জন্য পুষ্টি যুক্ত খাবার বেশি খাওয়া উচিৎ। যে ফল গুলোতে বেশি ফাইবার, ভিটামিন আর প্রোটিন আছে সেইগুলর বেশি করে সেবন করুন।
বিশেষ টিপ্পনীঃ সব উচ্চ ক্যালোরি খাদ্য আপনার স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক নয়। যেমনঃ ঘি আর এভক্যাডো উচ্চ ক্যালোরির হয় আর এদের মধ্যে পুষ্টি আর স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আছে, যেটা শরীরের জ্বালা কমাতে সাহায্য করে।
২। সকালে ব্রেকফাস্ট / নাস্তা করা অতি আবশ্যক
কখনই নাস্তা বা সকালের খাবার ছাড়বেন না। এতে আমাদের মেটাবলিক রেট কমে গিয়ে ওজন বৃদ্ধি করে আর পচন সমস্যা বাড়ায়। সকালের খাবার আমাদের মনোযোগ বাড়াতে আর ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৩। হাত ধোয়া জরুরি কিন্তু সবসময় হাত ধোয়া জরুরি না
হাত sanitizers গুলো কিছু কারনে তৈরি হয়েছিলো, যখন হাত নোংরা থাকবে তখন হাত ধোয়ার জন্য। কিন্তু যদি আপনি আপনার হাত কে সব সময় sanitizers দিয়ে ধুতে থাকেন সেটা স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক। এই কাজ তা করলাম হাত ধুলাম, ওই কাজ তা করলাম হাত ধুলাম, সব কীটাণু স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক নয়।
রিসার্চ থেকে জানা গাছে কিছু কিছু কীটাণু আমাদের স্বাস্থের জন্য সুস্থ তাই তাদের সংলগ্নে আসা জরুরি। খুব বেশি কীটাণু মুক্ত যায়গাও শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
আরে বাবা… আপনি বাড়ি তে থাকেন, কোন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট এ নয়
৪। অকারনে খাওয়া এড়ান
আপনার খিদে পেয়েছে আপনি খান, আপনার রাগ হয়েছে আপনি খান, আপনার ভালো লাগচ্ছে না আপনি খান, যদি না আপনি হাসপাতাল যেতে চান তাহলে এই ভাবে খাওয়া এড়িয়ে যান।
খাবার তখনি খাওয়া উচিৎ যখন খিদে পেয়েছে, আপনার পেট টা জাবড় ফেলার জায়গা নয় যে যা ইচ্ছে হল তাই ঢালতে থাকবেন। খিদে পেলেই খান আর স্বাস্থ্য খাবার খান। ফ্রিজের মধ্যে আছে বলে খাবার খেতে হবে এটা জরুরি নয়। এই সব খাওয়া আপনার স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
৫। পুষ্টির মাত্রা/লেবেল দেখে কিনুন
আমরা সবাই জানি পুষ্টির লেবেল কি হয়, কিন্তু আমরা জিনিস কেনার সময় সেটা কি আর দেখে কিনি? আমরা শুধুমাত্র আমাদের ট্রলি ভরিয়ে জাই আর পুষ্টির লেবেল কে এড়িয়ে জাই, আর এই পুষ্টির লেবেল আমাদের কে কি খাদ্য ভালো আর কি খারাপ সেটা বঝাতে কিন্তু পেছপা হয় না। এটা আমাদের কে বুঝতে সাহায্য করে প্রাকৃতিক আর কম ফ্যাট জাতীয় খাবার আমাদের জন্য কত ভালো।
পুষ্টির মাত্রা কৃত্রিম এডইত্তিভস আর প্রিসারভেটিভস এর সম্বন্ধে তথ্য দেয় যেগুলো আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। এটার থেকে আপনি জানতে পারবেন যে নিয়মিত ভাবে কতটা ক্যালোরির সেবন আপনার শরীরের জন্য জরুরী।
৬। নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা এড়িয়ে চলুন
এটা সব থেকে ভয়ঙ্কর জিনিস মানবতার জন্য আর হাস্যকর বিষয় হল এটা আমরা নিজেরাই করি, কারোর দ্বারা এই ক্ষতিটা হয় না। আমরা নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা করতে পছন্দ করি কিন্তু জানি না কেন? আমরা এই চিন্তা ধারা তে আত মগ্ন থাকি যে আমরা ভুলে জাই আমরা নিজেদের কতটা ক্ষতি করছি। ঠিক এর উলটো টা যদি করতে পারি আমাদের জীবন অনেক বেশি ভালো আর আশাবাদি হয়ে যাবে। সব কিছু এতোটা খারাপ ও হয় না যতটা আমরা ভাবি।
৭। যথোপযুক্ত উপাদান বিশিষ্ট সুষম খাদ্য
প্রত্যেক দিনের খাবারের মধ্যে প্রোটিন, মিনারেল, আইরন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, কারবস আর ফাইবার হওয়া খুব জরুরি। খাবার তখনি ব্যাল্যান্সড হতে পারে যদি ফল, শাঁক সব্জি, মাংশ, দুধ, আর হোল গ্রেন্স নিয়মিত ভাবে নেওয়া হয়।
৮। অর্ধ রাত্রে খাওয়া এড়ান
স্বাস্থ্যকর খাওয়ার মতন ঠিক সময় খাওয়া টা জরুরি। শুতে যাওয়ার অন্তত দু-ঘণ্টা আগে খাবার খেয়ে নেওয়া উচিৎ, এটা খাবার হজম করতে সাহায্য করে। মাঝ রাত্রে টুক টাক খাওয়াও উচিৎ নয়, এটা থেকে অম্বল ও গলা জ্বালা হতে পারে যেটা আপনার ঘুমের ক্ষতি করতে পারে।
৯। ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম শরীর আর স্বাস্থ্য কে ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ওয়ারকয়াউট, এরোবিকস, হাঁটা চলা আর জজ্ঞিংস আপনার হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণ করে আর সারা দিন কাজ করার সক্তি দেয়। সকালে ব্যায়াম করলে সারা দিন মন ফুরফুরে আর তাজা থাকে। এটা আপনার রক্ত সংবহন বাড়ায়, পেশীর টেনশন কমায়, আর ব্রেনের কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়। বেশির ভাগ মানুষের কাছেই অনেক অজুহাত আছে ব্যায়াম না করার জন্য, যেমন আমার কাছে ব্যায়াম করার জিনিস পত্র নেই, কাছাকাছি জিম নেই ইত্যাদি। ব্যায়াম করার জন্য জিম যাওয়ার দরকার পরে না, বাড়িতে বসেই পুশ-আপ বা ক্রাঞ্চেস একটা অনবদ্য অভ্যাস। রিসার্চ বলে যারা ব্যায়াম নিয়মিত ভাবে করে না তাদের জীবনের ৭ টা বছর কমে যায় তাদের থেকে যারা ব্যায়াম রোজ করে। এবার মনে হয় না যে এটা একটা অন্যতম কৃতিত্ব।
১০। দীর্ঘ ঘণ্টার জন্য টানা বসবেন না
আপনি বাড়িতে থাকুন, অফিসে থাকুন অথবা অন্য কথাও, কখনই একটানা বসে থাকা উচিৎ নয়। এটা আপনার মেটাবলিস্ম এর কারজ্য ক্ষমতা কম করে দেয় আর মাংস পেশী কে দুর্বল করে। চেষ্টা করুন যাতে প্রত্যেক ঘণ্টায় আপনি কিছু সময়ের জন্য ওঠেন, হাঁটা চলা করেন, আর আপনার মাংস পেশী কে প্রসারিত করেন। ওই যে কথায় আছে সুস্বাস্থ্য তখনি সম্ভব যখন আপনি জলদি শুতে যাবেন আর সকালে জলদি উঠবেন।
১১। যোগাসন এর অভ্যাস করুন
যোগাসন শরীর ও স্বাস্থ্য দুটো কেই ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এটা আপনার মন আর শরীর দুটোই স্বাস্থ্যকর রাখে।
১২। ধুম্রপান এড়িয়ে চলুন
ধুম্রপান আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকারক, এটা আজ নয়তো কাল শরীরের ক্ষতি করে। ক্যান্সার, ফুস্ফুস রোগ, হৃদ রোগ এইগুলো সবই হয় ধুম্রপানের জন্য।
১৩। অতিরিক্ত মদ্যপান নিষেধ
মদ্যপান দিনের শেষে ক্লান্ত অবসান্ন ভাব কমাতে সাহায্য করে কিন্তু তার সাথে এটা আপনার শ্বেত রক্ত কণিকা (WBC) কেও শরীর থেকে কমিয়ে দেয়। আর তার ফলে আপনার immunity system কে আরও কমজোর করে দেয়। এই জন্য মদ খাওয়া এক থেকে দু পেগ অব্দি কমান বা সপ্তাহে দু বার পান করুন। আমাদের মতে অন্য মদ ছেড়ে ওয়াইন পান করা ভালো।
১৪। বেশী নুন খাওয়া কমান
নুন এর পরিমান সব সময় কম মাত্রায় খাবেন, অতিরিক্ত সেবন আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। এর থেকে ভবিষ্যতে স্ট্রোক বা হৃদ রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
১৫। যত সম্ভব বেশি করে জল পান করুন
দিনে অন্তত ৮ থেকে ৯ গ্লাস জল পান করুন, এটা আপনার স্বাস্থ্য কে তাজা রাখতে আর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটা আপনাকে মসৃণ চামড়া পেতেও সাহায্য করে। আপনি ৮ থেকে ৯ গ্লাসের বেশী জল পান করুন যদি নিয়মিত ভাবে আপনি ব্যায়াম করেন।
১৬। সঠিক ঘুমের দরকার
অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরের জন্য খুব দরকার। এটা আপনার স্নায়ু গুলো কে শিথিল করে আর আপনাকে শরীরের যত্ন নিতে সাহায্য করে। আমাদের শরীর একটা মেশিন এর মত, যেমন প্রত্যেকটা মেশিন এর বিশ্রাম আর রিচারজের দরকার সেইরকম আমাদের শরীরের ও দরকার। আমরা প্রাই নিজের স্বাস্থের অবহেলা করি বেশি কাজ করে, কম ঘুমিয়ে যাতে কাজের কোন ক্ষতি না হয় কিন্তু আমরা মনোযোগ দিতে পারিনা যদি ঘুম ঠিক মত না হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই জন্য দ্বিতীয় বার ভাবুন কাজ কে বেশি প্রাধান্য দেবেন নাকি ঘুম কে, হয়তো আপনি অনেক বেশি দিয়ে দিচ্ছেন খুব কম কিছু পাওয়ার জন্য।
শরীর ও স্বাস্থের খেয়াল রাখুন। এটা আপনার পুরস্কার। ওপরে দেওয়া হেল্থ টিপস বা স্বাস্থ্য টিপস এর অবলম্বন করুন আর স্বাস্থ্যবান থাকুন।
The post স্বাস্থ্যই সম্পদ – সুস্বাস্থের কিছু টিপস appeared first on STYLECRAZE.